আজ শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫ || ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ শুক্রবার, ১০:৪৬ পূর্বাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২৫   |   sonalisandwip.com
অবশেষে বদলী হলেন বিতর্কিত সন্দ্বীপ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খান

সোনালী সন্দ্বীপ (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি ::
     শেষ পর্যন্ত চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলায় কর্মরত বিতর্কিত মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খানকে বদলী করা হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর বুধবার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর,ঢাকা থেকে ইস্যুকৃত এক প্রজ্ঞাপনের আদেশে তাঁকে ব্রাম্মনবাড়িয়ায় বিজয়নগরে বদলী করা হয়েছে।
সন্দ্বীপ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খানের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অশোভনীয় আচরন,অফিসে মাতলামি সহ আপত্তিকর বিভিন্ন কর্মকান্ডের নানা অভিযোগ উঠে। তার দু' তিনটি আপত্তিকর ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ভাইরাল হওয়ার পর  সন্দ্বীপের শিক্ষক ও সচেতন মানুষের মাঝে সৃষ্টি হয় অসন্তোষ ও সমালোচনার ঝড়।
  ইতোপূর্বে এই শিক্ষা কর্মকর্তা  ও জার্মানে অবস্থিত সন্দ্বীপ প্রবাসী  (ইউটিভিভ চ্যানেল ইনসাইডটিভি)সাংবাদিক নজরুল ইসলাম বিপ্লবের একটি চাঞ্চল্যকর ফোনালাপের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।  ভাইরাল হওয়া ওই ভিডিওতে মাদকসেবন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সন্দ্বীপ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার প্রদত্ত বক্তব্য নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
ভিডিওতে সাংবাদিক বিপ্লব জানতে চান, “আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে—আপনি কি মাদকসেবন করেন?” জবাবে শিক্ষা কর্মকর্তা আসলাম খানকে বলতে শোনা যায়,
“মা ছাড়া তো মাদক হয় না, যে ভাত খায় সে মাদক সেবন করে। জার্মানিতে বার আছে, ওইখান থেকে মদপান করে লোড হয়ে আমারে ফোন দেন, আকণ্ঠ মদপান করে আমাকে কল করেন—তারপর আপনার কথা শুনব, মজার ইনফরমেশন দিব। জার্মানির চ্যান্সেলর আমার ছাত্র। আমি ড্র করি হ্যান্ডসাম এমাউন্ট—টাকা-পয়সা, বাড়ি-গাড়ির অভাব নেই। কাউকে হত্যা করতে আমার এক সেকেন্ড সময় লাগে, আমি দেড় সেকেন্ড নিই না।” টেলিফোনে এ সাক্ষাৎকারটি প্রদানের সময় তিনি একটি বিদ্যালয় ভিজিটে ছিলেন,ওইসময় ক্লাশ সময়ের ঘন্টা বাজার ধ্বনি শোনা যায়।
এ বক্তব্য প্রচারের পর থেকে এ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মানসিক অবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় শিক্ষক ও অভিভাবকরা। তাঁরা এ শিক্ষা কর্মকর্তাকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত দাবী করে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার দ্রুত বদলী ও প্রশাসনিক তদন্তের দাবি জানান।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত মাসখানেক আগে পার্বত্য চট্টগ্রামের থানচি উপজেলা থেকে বদলী হয়ে সন্দ্বীপে যোগদানের পর থেকেই শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে।

উপজেলার উত্তর সন্দ্বীপ  কলেজের প্রভাষক নিঝুম খান তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, "তিনি মানসিক অসুস্থ,মদ গাজা পান করেন, শিক্ষকদের সঙ্গে বিশেষ করে মহিলা শিক্ষকদের সাথে অশোভন আচরণ করেন। পরিদর্শনে গেলে প্রতিষ্ঠান প্রধানের কাছ থেকে ভিজিট ফি দাবী করেন। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আসলাম খান বলেন,“আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।”

সন্দ্বীপে স্থানীয় এক সংবাদকর্মীর সাথে সাক্ষাৎ প্রদানের সময় তিনি গানের সুরে ফেনসিডিল খাওয়ার কথা স্বীকার করার ভিডিওটি ইতোমধ্যে  সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
    এর আগে অফিসের বারান্দায় উদোম গায়ে এ শিক্ষা কর্মকর্তার বেসামাল আচরন এবং মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্থানীয় চায়ের দোকানে বসে সুরে বেসুরে গাওয়া গানের আরো দুটি ভিডিও ভাইরাল হয়।

অফিসে উদোম গায়ে বসে থাকা শিক্ষা কর্মকর্তা সম্পর্কে এ.কে. এম নুরছাপা নামের সন্দ্বীপের একজন প্রধান শিক্ষক তাঁর ফেসবুক আইডিতে তীর্যক দৃষ্টিভঙ্গিতে লিখেন--উদোম গায়ে বসে সন্দ্বীপের মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার গভীর মনোযোগ দিয়ে ভাবছেন কিভাবে সন্দ্বীপ উপজেলা শিক্ষা ব্যবস্থাকে উন্নতির শিকড়ে নিয়ে যাওয়া যায়। ওনাকে শাস্তি স্বরূপ সন্দ্বীপ পাঠানো হয়নি, মনে হয় সন্দ্বীপবাসীকেই শাস্তি দেয়া হচ্ছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, তার এসব আচরন একজন শিক্ষা কর্মকর্তার সাথে কোনভাবে মানায় না। সন্দ্বীপের সকল প্রধান শিক্ষকের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে উক্ত কর্মকর্তার বদলী ও শাস্তি দাবী করে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।