
তুমি আকাশ থেকে কখন নামো?
আমি তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম,
নদীর উপর দিয়ে ছুটে যেতে যেতে—
সে হাসেনি। হাসার জন্য তো মাটি লাগে।
সে বলল—
“নামা আমার ভাষায় নেই।
আমার অভিধানে আছে শুধু উড়াল আর উড়াল। ”
দশ মাস ধরে সে একটানা আকাশে থাকে—
খায়দায়, ভালোবাসে, শূন্যে ডানা মেলে, অবাক করা কাণ্ড —
আকাশে থেকে থেকে ছানা জন্মানোর স্বপ্নও দেখে!
বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে পোকা কুড়িয়ে খায়,
পেটে যখন আগুন জ্বলে,
নদীর বুকে নেমে জলে ঠোঁট ভেজায়।
রাতে সে শান্তিতে ঘুমায়—
পুরোটা নয়। অর্ধেক মস্তিষ্ক জেগে থাকে তার,
কেউ কি জানে, উড়ে উড়ে মনে মনে সে কী স্বপ্ন বুনে?—
আমি কি জানি, মাটির সংসারে থেকেও
আকাশের কথা কেন এতো ভাবি? আমি বলি—
এভাবে তোমার বাঁচা কি অনেক কঠিন নয়?
সে বলে—
“আমার জন্য কঠিন হলো মাটিতে নামা।
ওখানে আমার পা-দু’খানি বড় দুর্বল।
একবার যদি মাটি ছুঁই—
নাজুক পায়ের ওপর ভর করে ফের
উঠতে পারব না। তাই নামি না।“ আমি বুঝে যাই—
এই পাখি আসলে একটি দর্শন।
যাদের জন্ম শুধু একটি মাত্র সত্য নিয়ে—
তাদের জন্য বিকল্প আর কিছু থাকে না।
পাখিটি বলে—
“যার জীবনে উন্মুক্ত আকাশ যুক্ত,
সে মাটিতে সুখ খুঁজতে যাবেই বা কেন?”
আমি বিস্ময়ে তাকিয়ে রই—
উড়তে উড়তে সে ক্রমে উপরে ওঠে এবং
এক উচ্চতায় গিয়ে মেঘের আড়ালে হারিয়ে যায়,
ভাসমান সাদা তুলার মতন নরম বিছানায় আরামে ঘুমিয়ে পড়ে।
নীচে আমি যখন দাঁড়িয়ে আছি—
দুই পায়ে, অতিরিক্ত নিরাপত্তা নিয়ে,
অপ্রয়োজনীয় কত ভয় বুকে বয়ে।
তখন বুঝি—
বনের বদলে পবনে পবনে এক ধরনের
পাখি আছে যারা বাঁচে উড়তে উড়তে,
আর মাটিতে কিছু মানুষ আছে যারা মরে নামার ভয়ে।
”কমন সুইফ্ট”—
সে কোনো পাখি নয়,
সে এক বিরাট প্রশ্ন—
বলো পাখি মনে রাখি,
কে তোমাকে এমন আকাশী জীবন দিলো?
ডিসেম্বর ১২, ২০২৫