
ওসমান হাদীর শাহাদাত শুধু একটি প্রাণহানির ঘটনা নয়—এটি ছিল বিশ্বাস, ধৈর্য ও তাকওয়ার এক নীরব পরীক্ষা।
সিঙ্গাপুর থেকে যখন তাঁর লাশ ঢাকায় পৌঁছায়, তখন ঢাকা মেডিকেল চত্বরে উপস্থিত ছিল অসংখ্য সাংবাদিকের ক্যামেরা। সবার চোখ ছিল এক দিকেই—স্ত্রী কখন আসবেন? শেষবারের মতো স্বামীর মুখ দেখতে কি তিনি ভিড় ভেঙে সামনে আসবেন?
রাত কেটে গেল। পরদিন সকাল প্রায় ৯টার দিকে তিনি এলেন।
কিন্তু কেউ তাঁকে দেখেনি।
কোনো ক্যামেরা, কোনো সাংবাদিক, এমনকি কোনো অপরিচিত পুরুষ মানুষের সামনেও তাঁকে দেখা যায়নি। নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যেই গাড়ি থামে।
নারী সদস্যদের সহায়তায় তাঁকে নামানো হয়। পুরুষদের সে স্থান থেকে দূরে রাখা হয়। লাশের পাশে তাঁকে প্রকাশ্যে দাঁড় করানো হয়নি।
নীরবে, সম্পূর্ণ পর্দার ভেতর থেকেই তিনি স্বামীর লাশের কাছে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ছিলেন—
কিন্তু সেই কান্নার শব্দ আমাদের কানে আসেনি।
আমাদের আর তাঁর মাঝে ছিল এক অদৃশ্য দূরত্ব—যার নাম ইসলামি শালীনতা।
তিনি সাংবাদিকদের সামনে আসেননি। কোনো বক্তব্য দেননি। কোনো ছবি তোলার সুযোগও দেননি। সাংবাদিকরা চেষ্টা করেও তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারেননি। কারণ তিনি এসেছিলেন প্রদর্শনের জন্য নয়—এসেছিলেন ইবাদতের অংশ হিসেবে শেষ বিদায় জানাতে।
সাংবাদিকদের সূত্রে জানা যায়, পরিবারের সদস্য ও আশপাশের মানুষের ভাষ্য একই—
ওসমান হাদীর স্ত্রী কঠোরভাবে ইসলামি নীতি মেনে চলেন। পরিবারের নারী সদস্য ছাড়া আজ পর্যন্ত কেউ তাঁর চেহারা দেখেনি।
এই দুনিয়ায় শুধু একজন পুরুষই তাঁর মুখ দেখার অধিকার পেয়েছিলেন—তিনি হলেন তাঁর স্বামী।
আজকের যুগে আমরা প্রায়ই দেখি—স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর কান্না ক্যামেরার সামনে, মিডিয়ার শিরোনামে।
কিন্তু ওসমান হাদীর পরিবার ভিন্ন এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বোনেরা ছিলেন, নিকটাত্মীয় নারীরা ছিলেন—কিন্তু স্ত্রী ছিলেন পর্দার আড়ালে, আল্লাহর হুকুমের ভেতরে।
এটাই ইসলাম।
এটাই তাকওয়া।
এটাই সেই ঈমান, যা শোকের মুহূর্তেও আল্লাহর সীমা অতিক্রম করে না।
ওসমান হাদীর স্ত্রী আমাদের শিখিয়ে গেলেন—
শোক মানেই আত্মপ্রদর্শন নয়,
ভালোবাসা মানেই ক্যামেরার সামনে ভেঙে পড়া নয়।
কখনো কখনো নীরবতাই সবচেয়ে বড় সাক্ষ্য।