আজ বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ || ১০ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বুধবার, ০৪:৫৪ অপরাহ্ন
বুধবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৫   |   sonalisandwip.com
..

প্রায় দেড় যুগ পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার (২৫ ডিসেম্বর) লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আর এর মধ্য দিয়ে দেশে ফিরতে তার দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হতে চলেছে। দলের পক্ষ থেকে তাকে স্বাগত জানাতে নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বিএনপি। পাশাপাশি তার সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় সরকার ও দল যৌথভাবে গ্রহণ করেছে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এদিকে তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের আশংকায় হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে যাত্রীদের বিমানবন্দরে পৌঁছানোর অনুরোধ জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। পাশাপাশি নিরাপত্তাজনিত কারণে বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা বিমানবন্দরে যাত্রী ছাড়া অন্য দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। খবর বাসস ও বিডিনিউজের। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরেই ঐতিহাসিক সংবর্ধনা মঞ্চে বক্তব্য শেষে তার মা বেগম খালেদা জিয়াকে দেখতে যাবেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি জানান, ২৫ ডিসেম্বর তিনি দেশে নেমে বিমানবন্দর থেকে এভারকেয়ার হাসপাতালে যাওয়ার পথে ৩০০ ফিট এলাকায় উপস্থিত জনসমাগমের উদ্দেশ্যে একটি সংক্ষিপ্ত শুভেচ্ছা বক্তব্য দেবেন। এরপর তিনি তার মাকে দেখে বাসায় ফিরবেন। গতকাল মঙ্গলবার পিজি হাসপাতালে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সাবেক নেতৃবৃন্দ এবং সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল কলেজের সাবেক ও বর্তমান ছাত্রদলের আয়োজনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে স্বাগত মিছিল–পূর্বক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ তথ্য জানান। সমাবেশে রিজভী বলেন, দীর্ঘ প্রায় ১৭ বছর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজ দেশ বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করতে যাচ্ছেন। আগামী ২৫ ডিসেম্বর তার আগমন উপলক্ষে সারা দেশে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে এবং লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে এক নজর দেখার জন্য ঢাকায় আসবেন। তিনি বলেন, ২০০৭ সালের মইনুদ্দিন–ফখরুদ্দিন সরকার ছিল শেখ হাসিনারই সমর্থিত সরকার। সেই সরকারের সময় বিনা কারণে তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং নির্মম শারীরিক নির্যাতন করা হয়। সেই নির্যাতনের পর তাকে এই পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকতে হয়। তিনি আরও বলেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার পর শেখ হাসিনার সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে দেশে ফিরতে বাধা দেয়। ১৭ বছর ধরে তাকে তার পরিবার, দেশ ও মানুষের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। তিনি তার মায়ের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি, এমনকি ছোট ভাইয়ের লাশ ও জানাজায়ও অংশ নিতে পারেননি। এসব ঘটনার জন্য শেখ হাসিনা দায়ী। বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, জিয়া পরিবার বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় ও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক পরিবার। এই পরিবারই স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া একজন নির্ভীক সৈনিকের মতো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছেন। এই পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তাদের মিত্ররা কোনো চক্রান্ত বাদ দেয়নি। নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রিজভী বলেন, আমরা সরকারের কাছে তার পর্যাপ্ত নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছি। সরকার আমাদের আশ্বস্ত করেছে যে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। দলীয়ভাবেও নেতাকর্মীরা তার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করবেন, ইনশাআল্লাহ। তিনি নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, জনসমাগম যত বড়ই হোক, সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করতে হবে। রাস্তার দুই পাশে দাঁড়িয়ে প্রিয় নেতাকে শুভেচ্ছা জানাবেন। কোনো বিশৃক্সখলা বা অরাজকতা করা যাবে না। তিনি তার মাকে দেখে বাসায় পৌঁছানো পর্যন্ত সবাই শৃক্সখলার সঙ্গে অবস্থান করবেন। সরকারের সর্বোচ্চ নিরাপত্তার উদ্যোগ : বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারেক রহমানের জন্য দলের পক্ষ থেকেও নিরাপত্তা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, আগামী ২৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে রাজধানীতে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। দেশে তার নিরাপদ আগমন নিশ্চিত করার জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সম্পূর্ণ সতর্ক এবং সমন্বিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জোর দিয়ে বলেন, সরকার জননিরাপত্তা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তারেক রহমানের নিরাপত্তা বিষয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. বাহারুল আলম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তাঁর সুরক্ষায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা পোশাকে ও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশের সদস্য মোতায়েন থাকবে। এছাড়াও বিএনপির পক্ষ থেকে তার প্রাইভেট নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন উপলক্ষে নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত সংখ্যক গোয়েন্দা পুলিশ মোতায়েন থাকবে। জানা গেছে, তারেক রহমানের নিরাপত্তায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দেশে ফেরার পর তারেক রহমান যাতায়াতের সময় পাবেন পুলিশি পাহারাসহ বিশেষ নিরাপত্তা। এ ছাড়া তাঁর বাসভবন ও অফিসেও থাকবে নিরাপত্তা। ইউনিফর্মধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকেও গোয়েন্দারা তারেক রহমানের নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমান বিমানবন্দর থেকে গুলশানে আসার পথে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। এ ছাড়া নিরাপত্তায় মাঠে থাকবে ঢাকা মহানগর পুলিশের সোয়াট টিমের সদস্যরা। ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, তারেক রহমানের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন ঢাকা মহানগরজুড়ে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বিএনপির দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দর থেকে গুলশান পর্যন্ত দলের পক্ষ থেকে তারেক রহমানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা হিসেবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. এ কে এম শামছুল ইসলামকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তার নেতৃত্বে চেয়ারপারসন সিকিউরিটি ফোর্সসহ একাধিক টিম কাজ করবে। বিমানবন্দর থেকে গুলশানের বাসা পর্যন্ত তারেক রহমানকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরে যাত্রীদের আগেভাগে পৌঁছাতে অনুরোধ : আগামী ২৫ ডিসেম্বর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ও এর আশপাশের সড়কে তীব্র যানজটের আশংকায় হাতে পর্যাপ্ত সময় নিয়ে যাত্রীদের বিমানবন্দরে পৌঁছানোর অনুরোধ জানিয়েছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জাতীয় পতাকাবাহী সংস্থাটি জানায়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ২৫ ডিসেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দর এলাকা, গুলশান সংযোগ সড়ক এবং পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়েতে (৩০০ ফিট) ব্যাপক জনসমাগমের সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে ওই দিন এলাকাগুলোতে বড় ধরনের যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক– উভয় রুটের সম্মানিত যাত্রীদের অনাকাক্সিক্ষত ভোগান্তি এড়াতে বিশেষ অনুরোধ জানানো হয়েছে। যাত্রীরা যেন নির্ধারিত সময়ের বেশ আগেই বিমানবন্দরে পৌঁছানোর প্রস্তুতি নিয়ে যাত্রা শুরু করেন। যাত্রীদের এই সহযোগিতা ওই দিনের ভ্রমণকে নির্বিঘ্ন, আনন্দদায়ক ও ঝামেলামুক্ত করতে সহায়তা করবে বলে আশা প্রকাশ করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। বিমানবন্দরে ২৪ ঘণ্টা দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা : বিশেষ কার্যক্রম ও নিরাপত্তাজনিত কারণে আজ বুধবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী ছাড়া অন্য দর্শনার্থী প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের জারি করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা থেকে ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। যাত্রীসেবা, নিরাপত্তা ও কার্যক্রমের শৃক্সখলা নিশ্চিত করতেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে বৈধ টিকিটধারী যাত্রী ছাড়া অন্য কোনো সঙ্গী বা দর্শনার্থী বিমানবন্দর এলাকায় প্রবেশ করতে পারবেন না। এই সাময়িক বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে যাত্রী এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের কাছে আন্তরিক সহযোগিতার অনুরোধ জানিয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।