আজ সোমবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২৫ || ১৫ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ সোমবার, ০৪:৪৬ অপরাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ০৩ এপ্রিল, ২০২৫   |   sonalisandwip.com

আব্দুর রব নিশান আব্দুর রব নিশান

জানের সন্দ্বীপ, প্রাণের সন্দ্বীপ, আমার সন্দ্বীপ, আমাদের সন্দ্বীপ, সোনালী সন্দ্বীপ, আলোকিত সন্দ্বীপ, আজকের সন্দ্বীপ, আঁই সন্দ্বীপ্পা এমন অনেক শব্দ দেশের আনাছে কানাছে এমন কি বিশ্বের প্রায় বেশীর ভাগ মানুষ এইসব শব্দের সাথে পরিচিত।

শিকড় থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হাজারো-লাখ সন্দ্বীপিয়নরা চাকরির সূত্র ধরে, আধুনিক জীবন যাপন ও উচ্চ শিক্ষার আশায় দ্বীপের শিকড় ছেড়ে পাড়ি জমিয়েছেন চট্রগ্রাম শহর আর দেশের আনাছে কানাছে বিভীন্ন জায়গায়, এমন কি দেশের বাহিরে বিশ্বের প্রায় বেশী ভাগ দেশেই রয়েছেন সন্দ্বীপিয়ানরা তাইতো নিজের জন্মভূমিকে অন্যের সামনে পরিচয়ে বেশীর ভাগ এই সব শব্দ ব্যবহার করেন সন্দ্বীপবাসী।

চট্টগ্রাম উপকূল ও সন্দ্বীপের মাঝখানে সন্দ্বীপ চ্যানেল অবস্থিত। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে নদীপথে প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে এ উপজেলার অবস্থান। সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপকূলের দূরত্ব প্রায় দশ মাইল। নোয়াখালীর মূল ভূখন্ড সন্দ্বীপ থেকে প্রায় ১২ মাইল পশ্চিমে অবস্থিত। সন্দ্বীপের প্রায় বিশ মাইল পশ্চিমে হাতিয়া দ্বীপের অবস্থান। সন্দ্বীপের সীমানা হচ্ছে পূর্বে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও চ্যানেলের পূর্ব পাড়ে সীতাকুণ্ড উপজেলা ও মীরসরাই উপজেলা, উত্তরে বামনী নদী, পশ্চিমে মেঘনা নদী ও তারও পশ্চিমে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর।

সন্দ্বীপের লবণ শিল্প, জাহাজ নির্মাণ কারখানা ও বস্ত্র শিল্প পৃথিবীখ্যাত ছিল। উপমহাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত হওয়ায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের ভ্রমণকারীরা এই অঞ্চলে এসে তাদের জাহাজ নোঙ্গর করতেন এবং সহজ বাণিজ্য ব্যবস্থা এবং পরিবহন সুবিধা থাকায় এই অঞ্চলে ব্যবসা এবং বসতি স্থাপনে আগ্রহ প্রকাশ করতেন। ১৭৭৬ সালের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রতি বছর সন্দ্বীপে উৎপাদিত প্রায় এক লক্ষ ত্রিশ হাজার মণ লবণ, তিনশ জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হত।

এছাড়া ভ্রমণ ও ধর্মপ্রচারের উদ্দেশ্যে ফরাসি ও ওলোন্দাজ পরিব্রাজকরা প্রায়ই সন্দ্বীপে আগমন করতেন।এই দ্বীপের রূপে মুগ্ধ হয়ে যুগে যুগে অনেক কবি, সাহিত্যিক, ঐতিহাসিক, পর্যটক এসেছেন এখানে। ১৩৪৫ খ্রিষ্টাব্দে ঐতিহাসিক পর্যটক ইবনে বতুতা সন্দ্বীপে আসেন। ১৫৬৫ সালে ডেনিশ পর্যটক সিজার ফ্রেডরিক সন্দ্বীপে আসেন এবং এর বহু প্রাচীন নিদর্শনের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দের ২৮শে জানুয়ারী মোজাফ্‌ফর আহমেদের সাথে সন্দ্বীপে আসেন বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

সন্দ্বীপ ভ্রমণের সময়কার স্মৃতির পটভূমিকাতেই কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর মধুবালা গীতিনাট্য রচনা করেন। সন্দ্বীপে বৃক্ষের ছায়াতলে বসে নজরুল তাঁর চক্রবাক কাব্যগ্রন্থের অনেকগুলো কবিতা রচনা করেন।

১৯৭১ সালে আবুল কাসেম সন্দ্বীপী ৭ই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষনটি চট্রগ্রাম কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র শেখ মুজিবের ভাষন যে জিয়াউর রহমান দিয়েছেন তা উল্লেখ করেন সবার সামনে।

সন্দ্বীপ ১৯৫৪ সালের পূর্ব পর্যন্ত সন্দ্বীপ নোয়াখালী জেলার অন্তর্ভুক্ত থাকলেও পরবর্তিতে একে চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ১৯৮৪ সালে সন্দ্বীপ থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়।

সন্দ্বীপে একটি পৌরসভা রয়েছে, যা ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। এ উপজেলায় বর্তমানে ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন রয়েছে। সম্পূর্ণ সন্দ্বীপ উপজেলার প্রশাসনিক কার্যক্রম সন্দ্বীপ থানার আওতাধীন।

সন্দ্বীপ নাম করনের পিছনের গল্প:- মেঘনার তীরে এই সুন্দর মায়াবী দ্বীপ প্রথমে ছিল জনমানুষহীন তাই সর্ব প্রথম এর নাম ছিল শূর্ণদ্বীপ।কেউ বলেন চন্দ্রদেবতা সোমের নামের অনুসারে দ্বীপের নাম হয়েছে সোম দ্বীপ। কেউবা বলেন দ্বীপের মাটি উর্বরতা বিবেচনা করে আদর করে নাম দেওয়া হয়েছিল স্বর্ণদ্বীপ...!অন্যদিকে এই কথা তুমুল প্রচলিত পশ্চাত্য ইউরোপীয় জাতিরা বাংলাদেশে আশার সময় দূর থেকে বালির স্তূব দেখে আনমনে উচ্চারণ করেছিল আহা ওই দূরে জলের বুকে কে এই বালি দিয়ে আবৃত শ্যামা সুন্দরী..? এর নাম দিলাম স্যান্ড-হীপ..! ভাষার বির্বতন পেরিয়ে যা আজকের সন্দ্বীপ।

প্রকৃতির লীলা ভূমি কত সুন্দর তোমার রূপ। দ্বীপের মায়াভরা ভালবাসা নিয়ে যতদূর যায় বারবার সন্দ্বীপিয়নরা ফিরে পায়, স্মৃতিময় শৈশব কালের স্মৃতিবিজড়িত সোনালী দিনগুলো তাই তো সুযোগ পেলেই কোলাহল শহরের মায়া ত্যাগ করে শিকড়ের টানে ছুটে আসেন কাঁদামাটির বন্ধনে আবদ্ধ নিজ জন্মভূমি সোনালী দ্বীপে।

আর ভোরের শিশির ভেজা রাতে মুক্তমনা পাঁখির কন্ঠস্বরে শুনেন মধুময় গান।এই ভূমিতে জন্মগ্রহণ করেন কতইনা গুরুজন মহামানব। আর এখানে উত্তাল জোয়ার ভাটার সাথে চলছে জীবনযাত্রার মান। নয়া মাঝির কন্ঠে ভাঁটিয়ালি গান। দ্বীপ তাদের স্বপ্নের পৃথিবী নিষ্টুর উত্তল নদী কখনো ভেঙে নিয়ে যা আমার মায়ের ভূমি।আমার অন্তময় মেঠোপথ চলা খুজি তোমায় রুপসি দ্বীপ কন্যা তুমি সবসময় সন্দ্বীপিদের হৃদয়ে দৃশ্যমান।

বাংলাদেশের যে কোন স্থান থেকে সন্দ্বীপ আসার জন্য সড়ক পথে চট্টগ্রাম এর সীতাকুণ্ড উপজেলা তে আসতে হবে ফেরি যোগে গাড়ি নিয়ে সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্য বাঁশবাড়িয়া ফেরি ঘাট যেটি স্থানীয় লোকদের কাছে বাঁশবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত নামে পরিচিত ওখানে আসবেন।

সকাল বেলা চট্টগ্রাম বাঁশবাড়িয়া ফেরি ঘাট থেকে সন্দ্বীপ গুপ্তছড়া ফেরি ঘাটের উদ্দেশ্য প্রথম বার ফেরি ছেড়ে যায় এটি সকাল ৬/৭ টার মধ্যে, ফেরিযোগে সন্দ্বীপ যেতে সময় লাগবে ১ ঘন্টা আর যদি কম সময়ে সন্দ্বীপ যেতে চান তাহলে আপনাকে আসতে হবে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ঘাটে ওখানে থেকে স্পিডবোট এর মাধ্যমে সন্দ্বীপ যেতে পারবেন সময় লাগবে ২০ মিনিট।

এ ছাড়াও রেল যোগে দেশের যে কোন জায়গা থেকে চট্টগ্রামগামী ট্রেনে সীতাকুণ্ড স্টেশনে নামলে আপনারা সন্দ্বীপে আসতে পারবেন, চাইলে ঢাকা আবদ্দুল্লাপুর থেকে বি.আর.টি.সি বাসে সরাসরি আসতে পারবেন এবং চট্টগ্রাম শহর হালিশহর অংলকার একে খান থেকে সরাসরি বাস যোগে ফেরি হয়ে সন্দ্বীপ আসতে পারবেন। আর হেলিকপ্টারে করে সন্দ্বীপে ল্যান্ড করারও ব্যবস্থা আছে!