আজ শুক্রবার, ১৪ মার্চ, ২০২৫ || ৩০ ফাল্গুন ১৪৩১ বঙ্গাব্দ শুক্রবার, ১২:৫৬ অপরাহ্ন
শুক্রবার, ১৬ আগস্ট, ২০২৪   |   sonalisandwip.com
ডঃ ফওজুল কবির খান'র মাতা : প্রচার বিমুখ এক রত্নগর্ভা মা সুরাইয়া বেগম মতি

 এস. এম জাকিরুল আলম মেহেদী । ।

মরহুমা সুরাইয়া বেগম এক বনেদি পরিবারের সন্তান,যার পিতৃ কুল ও মাতৃ কুল ছিল সন্দ্বীপ বিখ্যাত দুটি পরিবার। তার পিতৃ পরিচয় ও মাতৃ পরিচয় লিখার উদ্যেশ্য নয় তার পরে ও এসে যায় এ মহিয়সী সংগ্রামী নারীর পরিচয়।

বাটাজোড়ার জমিদার হাজী ওয়াসিল মালাদারের বাড়ীতে জন্ম গ্রহন করেন তিনি। পিতা মরহুম নজির মিয়া ও মাতা মরহুমা চেমন আফরোজ চৌধুরী। দাদা বাটাজোড়ার জমিদার মরহুম হাসমত মিয়া ও নানা কাটগরের জমিদার মরহুম আবুল হোসেন মিয়া চৌধুরী।

জমিদার নজির মিয়া ও চেমন আফরোজ দম্পতির প্রথম সন্তান সুরাইয়া বেগম।

সুরাইয়া বেগমের শিক্ষাগত যগ্যেতা আলোচনা করলে তাকে বলা যায় শিক্ষার প্রদীপ।

একাডেমিক শিক্ষার বড় কোন সনদ তার কাছে ছিলনা।বাড়ীর লজিং হুজুরের কাছে আরবী শিক্ষা ও বাটাজোড়া মাধ্যমিক স্কুলের ছাত্রীতি পাস বলে জানা যায়।সে যুগে ধর্মীয় অনুশাসন কঠোর ভাবে পালন হতো বিধায় নারী শিক্ষার প্রতি অনুউৎসাহিত ছিল সবায় তাই তিনি ও উচ্চ শিক্ষা হতে বঞ্চিত হন।

মরহুমা সুরাইয়া বেগমের শশুরালয় ছিল আলেম ওলামা সমৃদ্ধ পরিবার।সে পরিবারের মানুষ গুলো দ্বীনি শিক্ষীত ও আল্লাহ মুখী হওয়ায় সুরাইয়া বেগম ও তাদের সাথে মিশে যায় পরম মমতায়।

হরিশ পুরের মাওলানা আব্দুল হাকিম সাহেব ছিলেন ওনার শশুর।মাওলানা আব্দুল হাকিম সাহেব এক জন বড় আলেম ও কাটগর মাদ্রাসার সিনিয়র শিক্ষক ছিলেন।মাওলানা আব্দুল হাকিম সাহেবের বড় সন্তান প্রফেসর মরহুম আসিফুল হক খান সাহেব ছিলেন মরহুমার স্বামী।মরহুম আসিফুল হক খান সাহেব ছিলেন উর্দু ভাষাবিদ ও আরবী জ্ঞানের পন্ডিত। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উর্দু সাহিত্যে মাস্টার্স ডিগ্রী অর্জন করেন।কর্মময় জীবনে মরহুম আসিফুল হক খান সাহেব অধ্যাপনা কে পেশা হিসাবে বেছে নেন।তিনি পেশাগত কারনে বিভিন্ন কলেজে অধ্যাপনা করেন ও চাকুরী জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনি চট্টগ্রাম সরকারী কলেজের উপাধ্যক্ষ পদে পদায়ন হন ও ১৯৮০ সালে তিনি চট্টগ্রাম কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসাবে অবসরে যান।

মরহুমা সুরাইয়া বেগম একজন কলেজ শিক্ষকের সহধর্মনী হয়ে অনেক সংগ্রাম করেন।সে কালে শিক্ষক দের অধিক মর্যাদা থাকলে ও অর্থনৈতিক ভাবে তারা ছিল একে বারে অসহায়।তাই বড় পরিবারের বরন পোষন করে নিজের সন্তান দের উন্নত মানের লেখা পড়া চালিয়ে যাওয়া ছিল বিষম কষ্ট সাধ্য ব্যাপার।মরহুমা তার পিতৃ কুলের জৌলস ভুলে মরহুম প্রফেসারের প্রভাবে নিজ সন্তান দের কে দেশের আদর্শ নাগরিক হিসাবে সুশিক্ষিত সৎচরিৎ ও খোদা ভীরু হিসাবে গঠন করে সু প্রতিষ্ঠিত করেন।তার সন্তান রা আজ দেশের মানুষের কাছে কৃতি সন্তান হিসাবে পরিচিত।

মরহুমার বড় ছেলে ডঃ ফওজুল কবির খান।তিনি বাংলাদেশ সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ ও জ্বালানী সচিব ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞ,

দ্বিতীয় ছেলে.. লেফটেন্ট কর্নেল (অবঃ) রুহুল মুনির খান।এক জন সৎ ও চৌকস সেনা কর্ম কর্তা হিসাবে তিনি বাংলাদেশ মেলিটারী থেকে অবসরে যান।

তৃতীয় ছেলে... আফছার খান।প্রকৌশলী ও ইংল্যান্ডের খ্যাত নামা এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

কন্যাদের মধ্যে.....

ডাঃ বদরুন্নেসা করিম।

এম বিবিএস (চমেক)

স্বামী ডঃ জেড করিম। সাবেক সচিব মৎস্য ও পশু সম্পদ মন্ত্রনালয়। ঢাকা।

ফরহাদ আরা

বিএসসি অনার্স এমএসসি (রসায়ন)চ.বি

স্বামী..আবুল কাসেম

চাটার্ড একাউন্টেন্ড।

শওকত আরা আমিন

বিএ অনার্স এম এ (অর্থনীতি)চ.বি।

স্বামী..আমিনুল হক চৌঃ।এফ সি এ।

নুজহাত আরা কলি

বিএ (অনার্স)চ.বি।

স্বামী সামছুল করিম

প্রকৌশলী (বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার).

মরহুমা সুরাইয়া বেগমের পরিবার ছিল প্রচার বিমুখ,এত খ্যাতিমান ও সুশিক্ষিত সন্তান থাকার পরেও সন্দ্বীপের ইতিহাসে একজন রত্ন গর্বা মা হিসাবে ঠাই হয়নি মরহুমা সুরাইয়া বেগমের।মরহুম নজির মিয়া ও মরহুমা চেমন আফরোজ দম্পতির প্রথম সন্তান সুরাইয়া বেগম কে আদর করে মতি নামে ডাকতো সবাই।

মরহুমার সাথে দুনিয়াবী কোন স্বার্থ না থাকায় এক জন রক্ত সম্পর্কের প্রতিনিধি হিসাবে আল্লাহ সুবহানুতায়ালার দরবারে আরজি আল্লাহ যেন মরহুমা কে ক্ষমা করে জান্নাতুল ফেরদাউসের মেহমান বানিয়ে দেন।

গত কয়েক বছর পুর্বে এ মহিয়সী নারী জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে চির কবর বাসী হন।ইন্নালিল্লাহি ওইন্না ইলাইহি রাজিউন।

-

zakirulmehadi@gmail.com