সন্দ্বীপ থেকে ফিরে- এস এম জাকিরুল আলম মেহেদী
-
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলের বুক চিরে যে দ্বীপ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে টিকে আছে, তার নাম সন্দ্বীপ।
কখনো বঙ্গোপসাগরের জলোচ্ছ্বাসে ভাঙেছে, কখনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে দিশেহারা হয়েছে, আবার অবহেলায় হারাতে বসেছে তার প্রাচীন গৌরব।
কিন্তু সেই দ্বীপের মানুষ আজ নতুন স্বপ্নে বুক বাঁধছে — আর এই স্বপ্নের স্থপতি সন্দ্বীপেরই সন্তান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ডঃ ফাওজুল কবির খান।
যাতায়াতের বিপ্লব : সন্দ্বীপের ইতিহাসে নতুন অধ্যায়
একসময় সন্দ্বীপ থেকে চট্টগ্রামে বা ঢাকায় যেতে হলে দ্বীপবাসীকে হিমশিম খেতে হতো — নদীপথে ছোট লঞ্চ, তারপর ট্রলার, তারপর সড়ক। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে যেত। নদী পথে নৌ দূর্ঘটনায় প্রতি বছর অনেক প্রাণ সলিল সমাধি ঘটেছে, অনেক গর্ভবতী জননী নিরাপদ নৌযানের অভাবে ঘাটে কিংবা নদীতে সন্তান প্রসব কিংবা মৃত্যু বরণ করে অনেক দুঃখের স্মৃতি সৃষ্টি করেছে।
অসহায় সন্দ্বীপবাসীকে জিম্মি করে একশ্রেণির টাউট বাটপার সিন্ডিকেট করে দরিদ্র মানুষের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
এই দুঃখের দিন বদলাতে সরাসরি হাত লাগিয়েছেন ডঃ ফাওজুল কবির খান।
সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম ফেরি সার্ভিস
সন্দ্বীপের মানুষের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল আধুনিক ফেরি সার্ভিস। ডঃ ফাওজুল কবির খান দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথমেই সন্দ্বীপ-চট্টগ্রাম নৌপথকে জাতীয় গুরুত্বের রুট হিসেবে ঘোষণা করান।সন্দ্বীপকে নৌ বন্দর ঘোষনা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে দূষিত জেলা পরিষদের হাত থেকে ঘাট উদ্ধার করে দ্বীপ বাসীকে সিন্ডিকেটের কালো থাবা থেকে রক্ষা করেন।
দুইটি নতুন রো-রো ফেরি ইতোমধ্যেই চালু হয়েছে।
সন্দ্বীপের লঞ্চ ফেরি টার্মিনাল পুনর্নির্মাণ হচ্ছে আধুনিক মানে।
বছরে প্রায় ১০ লাখ মানুষ ও ৫ লাখ টন পণ্য এই রুটে সহজে চলাচল করতে পারছে, যা দ্বীপের অর্থনীতি জাগিয়ে তুলছে।
ঢাকা থেকে সরাসরি সন্দ্বীপ : সড়কপথে প্রথমবারের মতো
একসময় সন্দ্বীপের মানুষকে ঢাকায় যেতে হলে ২-৩ ধাপে বাস বদলাতে হতো। আর এখন?
ডঃ ফাওজুল কবির খানের তদারকিতে বিআরটিসি সরাসরি ঢাকা-সন্দ্বীপ রুট চালু করেছে — যা দ্বীপবাসীর জন্য এক অনন্য উদ্যোগ।
প্রতিদিন ৩টি ডিরেক্ট বাস ঢাকা কমলাপুর থেকে সরাসরি সন্দ্বীপ উপজেলা পর্যন্ত চলাচল করছে।
ভাড়া সাধারণ মানুষের নাগালে।
যাত্রীদের জন্য নিরাপদ বিশ্রাম পয়েন্ট ও অনলাইন টিকিট বুকিং চালু হয়েছে।
নৌযাত্রায় নতুন নিরাপত্তা ও বাণিজ্য....
ডঃ ফাওজুল কবির খানের আরেকটি বড় উদ্যোগ হলো নৌযাত্রায় নিরাপত্তা।
নতুন ফেরিতে লাইফ জ্যাকেট, ডিজিটাল নেভিগেশন সিস্টেম থাকছে।
সন্দ্বীপ ঘাটে মালামাল হ্যান্ডলিং জেটি হচ্ছে, যাতে কৃষি ও মৎস্যপণ্য দ্রুত বাণিজ্যকেন্দ্রে পৌঁছাতে পারে।
দ্বীপবাসীর মুখে মুখে এক নাম — ডঃ ফাওজুল কবির খান
আব্দুর রহিম, সন্দ্বীপের একজন ব্যবসায়ী—
"আগে ট্রলারে মাল নিয়ে যেতাম, ঝড় আসলে ক্ষতি হতো। এখন ফেরি আছে, পণ্য সহজে যায় — দামও ভালো পাই। সব স্যারের জন্য।"
সাবিনা /সানজানা, ঢাকায় পড়ুয়া ছাত্রী বলেন —
"আমরা এখন বাড়ি আসি সরাসরি বাসে। পরিবারকে সময় দিতে পারি, আগে এত সহজ ছিল না।"
যা বদলে দিচ্ছে সন্দ্বীপের অর্থনীতি.....
# সরাসরি বাস ও ফেরি চালু হওয়ায় ঢাকার পাইকারি বাজারে সন্দ্বীপের শাকসবজি, চিংড়ি, মাছ সহজে যাচ্ছে।
# পর্যটকেরাও আগ্রহী হচ্ছে — সন্দ্বীপে ইকো ট্যুরিজম গড়ে উঠছে।
# যোগাযোগ খরচ কমায় দ্বীপের মানুষ এখন চট্টগ্রাম-ঢাকা সহজে যাতায়াত করে ব্যবসা-বাণিজ্য করছে।
একটি স্বপ্ন, এক মানুষের দূরদৃষ্টি.....
সন্দ্বীপ উপজেলার সন্তান, বিশিষ্ট সাংবাদিক, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জনাব সালেহ নোমান বলেন,
"ডঃ ফাওজুল কবির খান সাহেবের মতো নেতৃত্ব না থাকলে সন্দ্বীপ আজও সেই পুরনো ভাঙা দ্বীপই থাকত। ফেরি আর বাস রুট চালু হওয়ায় দ্বীপের মানুষ এখন মূল ভূখণ্ডের সাথে সমানভাবে বাণিজ্যে যুক্ত হচ্ছে।"
স্বপ্নের শেষ কোথায়?
সন্দ্বীপের মানুষ এখন বলছে — সড়ক, নদী আর ফেরি — সবকিছুর এই সমন্বয় সন্দ্বীপকে একদিন বাংলাদেশের মডেল উপকূলীয় উপজেলাতে রূপান্তর করবে।
ডঃ ফাওজুল কবির খানের হাত ধরে শুরু হওয়া এই যাত্রা থেমে যাবে না — এমনটাই প্রত্যাশা পাঁচ লক্ষ সন্দ্বীপবাসীর।
পরিশেষে....
বঙ্গোপসাগরের বুকে নতুন করে জেগে ওঠা স্বপ্নের দ্বীপ সন্দ্বীপ আর অন্ধকারে থাকছে না —
ফেরি সার্ভিস, নৌপথের নিরাপত্তা, সরাসরি বিআরটিসি বাস চালু — সবই প্রমাণ করছে, সঠিক নেতৃত্বে শতাব্দী প্রাচীন দ্বীপও বদলাতে পারে।
আর এই নেতৃত্বের নামই — ডঃ ফাওজুল কবির খান।
তাই সন্দ্বীপবাসীর একটাই বাক্য —
"ধন্যবাদ স্যার, আমাদের স্বপ্নগুলো জোয়ারের মতো আবার ফিরিয়ে আনার জন্য।"
-------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
এস এম জাকিরুল আলম মেহেদী, মধ্যপ্রাচ্য প্রতিনিধি... দৈনিক একুশের বাণী ও মাসিক সোনালী সন্দ্বীপ, কুয়েত।