অন্য লোকে মন্দ বলে—
আমি নাকি অতিরিক্ত আবেগী,
একটুখানি প্রশংসায় মন কাঁপে,
তারচেয়ে বড় কথা—
কোনটা গুণকীর্তন আর কোনটা অপমান
বোকার মতো আমি এসবের কিছুই
বুঝতে পারি না।
তারা বলে—
আমি কথা বলি অনেক বেশি,
প্রশ্ন করি এমন জায়গায়,
যেখানে নাকি চুপ করে থাকাটাই বুদ্ধিমানের কাজ।
মাঝেমাঝে এমনও হয়—
কোনো ছাত্রের চোখের ভাষা ভুল পড়ি,
মুখের কথা বুঝতে বড্ড দেরি করে ফেলি।
ভাষা-দুর্বলতায় নিজেকে যখন বুঝাতে পারি না
তখন তারা মুচকি মুচকি হাসে।
অন্য লোকে বলে—
আমি সবকিছুকে নীতি দিয়ে ব্যাখ্যা করি,
আবার কেউ বলে—অর্থনীতি।
তারা আরও বলে—ভালোবাসা, কিংবা ভালো বাসা
অথবা একটি সন্ধ্যার পেঁজা মেঘ,
তাদের জন্যও ”মুদ্রাস্ফীতির হারে” জবাব খুঁজি।
তারা আমাকে নিয়ে উপহাসে হাসে—
আমি পুরনো দিনের কথা বলে ক্লান্ত করি,
মেলা, বায়োস্কোপ, শিল কুড়োনো বৃষ্টি-রাত
নাকি এখনকার ছাত্রছাত্রীরা বুঝে না।
তবু আমি বলে যাই, বলতেই থাকি।
আমার স্ত্রী বলেন—
আমি নাকি সঠিক জায়গায়, সঠিক সময়,
সঠিক কথা বলতে পারি না,
যাকে-তাকে মনের কথা অকাতরে বলে ফেলি,
দুধ গরম দিতে দিলে—
আমি তাতে ছন্দ খুঁজি,
চুলায় আগুন নয়,
খাতার পাতায় শব্দ গুনে দেখি—
"ফুটে ওঠা দুধ" মানে কী?
ছেলেমেয়েরা ভাবে—
বাবা এক আজব মানুষ,
দেওয়ালঘড়ি দেখে সময় না বলে
চাঁদ দেখে কবিতা লেখে।
আরও বলে—”আব্বু , একি— তুমি
একটা মাছিও মারতে পারো না?
তুমি কিচ্ছু বুঝো না।”
তারা জানে না—
রাত্রি বারোটার পর
আমি একা বসে থাকি খোলা জানালায়,
আকাশের তারা গুনি আর হিসাব করি—
জীবনের ক্ষুদ্র ভুলগুলো, বিশ্লেষণও করি,
কিন্তু এসব কথা কাউকে বলা হয় না কখনো।
জানি, আমি নিখুঁত নই—
এই কবিতার ছায়ার নিচেও
আমার একেকটি ছোট ব্যর্থতা বড় হয়ে বসে আছে বনে,
মৃদু বাতাসে মূর্তাপাতার মতো দোলে দোলে হাসে।
ওই ভুলগুলোকে হয়তো ভুল করে ভালোবেসে ফেলেছি,
তবু তাতে দুঃখ নেই, কারণ ওরাই তো গড়েছে
আজকের এই আমাকে।
অন্য লোকে মন্দ বলুক,
আমি তবু নিজের বুকের ভেতর
একটা নিরাপদ আশ্রয় রাখি
নিজেরই জন্যই—
ভুল নিয়ে, শত শত ক্ষত নিয়ে,
একজন অতি সাধারণ মানুষ হয়ে।
জুলাই ২১ ২০২৫