আজ বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫ || ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার, ১০:৫৭ অপরাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই, ২০২৫   |   sonalisandwip.com
সন্দ্বীপে পিডিবির ঠিকাদার অপহরন ও হত্যাচেষ্টা, মানবাধিকার সংগঠনের নিন্দা-প্রতিবাদ

  • সন্দ্বীপে পিডিবির ফ্যাসীবাদ বিরোধী ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদা দাবী 
  • পরবর্তীতে অপহরন, অমানবিক বর্বর নির্যাতন এবং হত্যাচেষ্টা
  • মানবাধিকার সংগঠনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি


চট্টগ্রাম (সন্দ্বীপ) বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-র একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে তাকে অপহরণ, মারধর ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় বিভিন্ন সংস্থা, মানবাধিকার ও সাংবাদিক সংগঠন তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি প্রদান করেছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য- হিউম্যানিস্ট সোসাইটির পক্ষে নির্বাহী পরিচালক এম এ আই ফিরোজ চাষী, সেভ দ্যা রিভার্স অব বাংলাদেশ এর পক্ষে চেয়ারম্যান আনিসুর রহমান, ডেপলপমেন্ট এন্ড রিসার্স অর্গানাইজেশন ফর দ্যা পিপলস্ (ড্রপ) এর পক্ষে প্রেসিডেন্ট শোয়েব আহমেদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার ও পরিবেশ ফাউন্ডেশনের পক্ষে চেয়ারম্যান শামসুল হক, ওয়ার্ল্ড পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস্ সোসাইটির পক্ষে চেয়ারম্যান এডভোকেট আবদুল মজিদ, পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়ন সোসাইটির পক্ষে সভাপতি মোহাম্মদ হোসাইন, জাতীয় সাংবাদিক সোসাইটির পক্ষে মহাসচিব নিখিল চক্রবর্তী এবং হিউম্যান এন্ড নেচার কনসোর্টিয়াম। এম.মিলাদ উদ্দিন মুন্নার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় সকল সন্ত্রাসীদের দ্রুত আটক করে আইনে সোপর্দ করতে বিবৃতি প্রদান করেন।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি)-র একজন ঠিকাদারের কাছ থেকে চাঁদা না পেয়ে তাকে অপহরণ, মারধর ও হত্যাচেষ্টাসহ তার মূল্যবান দাপ্তরিক ও ব্যাক্তিগত সামগ্রী ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে ৬ জনকে সনাক্ত করা হলেও অজ্ঞাত আরো ১৫-১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে। গত ২৮ জুন এ ঘটনায় সন্দ্বীপ থানায় মামলা হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত পুলিশ কাউকে আটক করতে সক্ষম হয়নি। মামলার এজাহার অনুযায়ী ভুক্তভোগী এম. মিলাদ উদ্দিন মুন্না মাত্র ৩ বছর পূর্বে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়ে ২০২৪ এর শুরু থেকে ঠিকাদার হিসেবে সন্দ্বীপে প্রকল্পের কাজ করছেন। ঠিকাদারী ব্যবসার পূর্বে তিনি দীর্ঘদিন (প্রায় ২৫ বছর) সাংবাদিকতা করতেন। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মালিকদের জাতীয় ভিত্তিক সংগঠন বনপা’র চট্টগ্রামের সাধারন সম্পাদক এবং চট্টগ্রাম অনলাইন প্রেসক্লাব এর সাধারন সম্পাদক ছিলেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ৫ আগস্টের পর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবকে ফ্যাসিবাদমুক্তকরণে তিনি বিশেষ ভুমিকা রেখেছেন এবং বর্তমানে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের তিনি একজন সক্রিয় সদস্য।

জানা গেছে, গত ২৭ জুন ২০২৫ এম. মিলাদ উদ্দিন মুন্না চট্টগ্রাম থেকে সন্দ্বীপ বিদ্যুৎ অফিস গিয়ে তার দাপ্তরিক কার্যক্রম শেষে ফেরার সময় আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে স্থানীয় সেনেরহাট তিন রাস্তার মোড়ে ১৫-২০টি মোটর সাইকেলে একদল সন্ত্রাসী তাকে ঘিরে ফেলে। তারা তাকে দেশীয় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার মোটর সাইকেল গতিরোধ করে এবং জোরপূর্বক অপহরণ করে মুছাপুর ধামের মাস্টারপাড়া স্কুলের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে তারা ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তারা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে নির্মমভাবে মারধর করে। পরবর্তীতে স্থানীয়দের উপস্থিতি টের পেয়ে সন্ত্রাসীরা তাকে ফেলে পালিয়ে যায়। এ সময় ভুক্তভোগীর  ২টি মোবাইল ফোন, একটি হাতব্যাগ যার মধ্যে ছিল ৮১,০০০ টাকা, ৭টি ভিসা ব্যাংক কার্ড, “জেড.টি.আই কর্পোরেশন” এর ৬টি সাক্ষরবিহীন চেক ও ৩টি ব্যবসায়িক চেক (মোট ২.৫ লক্ষ টাকা মূল্যের) তারা লুট করে নিয়ে যায়। মামলায় অভিযুক্তরা হলেন- যুবদল নেতা আবদুল করিম, মো. জুয়েল, দিদারুল আলম জিল্লু, মঈনুল শুভ, যুবলীগ নেতা শাহদাত হোসেন ও আলতাফ। 

তবে একটি বিশ্বস্থ সূত্রে জানা গেছে- অস্ত্র ও হত্যাচেষ্টাসহ একাধিক মামলার আসামি আনিস আক্তার টিটু এবং নুর উদ্দিন এ ঘটনার নেপথ্যে প্রধান মদদদাতা। ডিজিএফআই, এনএসআই ও পুলিশের কাছে তাদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ রয়েছে। অস্র, মাদক ও হত্যাচেষ্টাসহ বহু মামলারও আসামী তারা। 

সন্দ্বীপ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মানস বিশ্বাস বলেন, 'মুন্না নামের একজন গুরুতর আহত অবস্থায় আমাদের কাছে ভর্তি হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে আমরা চমেক হাসপাতালে রেফার করেছি।'  

এম. মিলাদ উদ্দিন মুন্না বলেন, তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলা চালানো হয়েছে। তার কাছ থেকে মিথ্যা স্বীকারোক্তিমূলক ভিডিও ধারণ করতে চেয়েছে সন্ত্রাসীরা। তাতে রাজী না হওয়ায় তারা এক ঘন্টা ধরে এই বর্বর শারিরিক নির্যাতন চালায়। তিনি বর্তমানে আরো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। কারন আসামীদের একজনও আটক হয়নি। এ ঘটনায় স্থানীয় জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। 

সন্দ্বীপ থানার অফিসার ইনচার্জ এ.কে.এম শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, "ঘটনার পরপরই মামলা রজু করা হয়েছে। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।"

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল করিম কচি বলেন, মুন্না ঠিকাদারি ব্যবসার অনেক আগে থেকেই সাংবাদিকতা পেশার সাথে জড়িত, চট্টগ্রামে তার একটা নিউজপোর্টাল ছিল। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকার কারণে তার পোর্টালটি হাসিনা সরকার বন্ধ করে দেয়। তার উপর এধরনের ন্যক্কারজনক হামলা দুঃখজনক। যে সকল সন্ত্রাসী এ ঘটনার সাথে জড়িত তাদের তিনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।

এই ঘটনায় গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্যেও তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে।
এই বিষয়ে উদ্বেগ ও তীব্র ক্ষোভ জানিয়েছেন সাংবাদিক মহল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দা ও প্রতিবাদের ঝড় বইছে। সাংবাদিক এম. মিলাদ উদ্দিন মুন্নার উপর সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে একজন সিনিয়র সাংবাদিক লিখেছেন, যারা এসব কাজ করেছে তারা যে দলের কর্মী সে দলের অনেক নেতা কর্মীকে সে (মুন্না) বিগত বছরগুলোতে অকাতরে সাহায্য করেছে। চট্টগ্রাম শহরে তার বাসা ছিলো অনেক নিপিড়ীত নেতা-কর্মীর ঠিকানা।  

আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বন্ধ হয়ে যাওয়া গণমাধ্যমগুলোর চাকুরিচ্যুত অনেক সাংবাদিককে চাকরি দিয়েছেন মুন্না। সেই সময়ে গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলতেন সে বিএনপি করে, জামায়াত শিবিরের সাথে তার ভালো সম্পর্ক। তার বাসায় বিএনপির লোকজন আসা যাওয়া করে, মামলায় হাজিরা দিতে এসে তার বাসায় থাকে। ফলে ২০২২ সালে ফ্যাসিবাদ বিরোধী হওয়ায় তার অনলাইন নিউজ পোর্টালটি সরকার বন্ধ করে দেয়। এছাড়াও ২০১৭ সালে সন্দ্বীপে ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে নিউজ করায় এই সাংবাদিকের পিতার উপর হামলা করেছিলো ফ্যাসিবাদের তৎকালীন সঙ্গীরা। 

দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান মজুমদার নাজিম লিখেছেন, হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে হামলাকারী চাঁদাবাজ দুর্বৃত্তদের গ্রেফতার করা হোক।' ৭১ টিভির চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান সাইফুল ইসলাম শিল্পী লিখেছেন, 'দুঃখজনক ঘটনা, জড়িতদের শাস্তি দাবী করছি।' সাংবাদিক কামাল পারভেজ লিখেছেন, এম মিল্লাদ উদ্দীন মুন্না, আমার স্নেহভাজন। সন্দ্বীপে তার নিজ এলাকায় এই সন্ত্রাসী বর্বর হামলা চালানো খুবই দুঃখজনক। আসলে প্রতিবাদের ভাষা নেই। তারপরও তীব্র নিন্দা ও হামলাকারীদেরকে বিচারের আওতায় আনার জন্য প্রশাসনের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

এটিএন নিউজের সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম পারভেজ লিখেছেন, "নিন্দা জানায়, জুলাই পরবর্তীকালে যদি এখনো সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয় তা মেনে নেওয়া যায় না। দোষীদের দৃষ্টান্ত মুলক শাস্তির দাবী করছি।

সাংবাদিক রিটন মজুমদার লিখেছেন, এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হোক। সাংবাদিক মুকুল মহি লিখেছেন, আমাদের দেশে সবাইকে 'আমার চামচা' বানানোর নীতি থেকে রাজনৈতিক নেতাদের বেরিয়ে আসতে হবে। না হয় স্বৈরাচার সবসময়ই জন্ম নেবে। এমডি মাহবুবুর রহমান লিখেছেন, চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য মুন্নার উপর হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।

জড়িতদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার দাবী করছি।' সাংবাদিক এস এম পিন্টু লিখেছেন, 'সাংবাদিক মুন্নার উপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই একই সাথে অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানাচ্ছি। দলমত বা ব্যক্তি বিবেচনা না করে অপরাধের বিচার চাই। 'চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য ও আজকের বিজনেজ বাংলাদেশ এর চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রধান জাহাঙ্গীর আলম লিখেছেন, হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হোক।' সামসুদ্দিন চৌধুরী লিখেছেন, নিন্দা জানাই। এই সরকারের আমলে সাংবাদিক নির্যাতন কোন ভাবে আশা করা যায় না। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। আমার খুবই প্রিয়জন মুন্না ভাইয়ের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।'

 চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আলাউদ্দীন সিকদার বলেন, সন্দ্বীপে মুন্নার উপর হামলা ছাড়াও প্রতিদিন আইন শৃংখলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটছে। পুলিশ প্রশাসন আইন শৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ব্যার্থতার পরিচয় দিচ্ছে। প্রসাশন এ দায় এড়াতে পারে না। তিনি মুন্নার উপর হামলাকারী সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবী জানান। 

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টন বলেন, মুছাপুর ধামে একজন তরুণ উদ্যোক্তা ও বিদ্যুৎ বিভাগের ঠিকাদার এম. মিলাদ উদ্দিন মুন্নাকে আটকে রেখে তার উপর বর্বর নির্যাতন চালানোর ঘটনায় তিনি মর্মাহত। তিনি এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং প্রশাসনের কাছে এই ঘটনায় জড়িত সকলকে আইনের আওতায় এনে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার দাবী করেন।

চট্টগ্রাম রেন্জের ডিআইজি মোঃ আহসান হাবিব পলাশ, জেলা পুলিশ সুপার মোঃ সাইফুল ইসলাম সানতু এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) মোঃ সিরাজুল ইসলাম -এর সাথে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ যোগায়োগ করলে তারা আসামীদের আইনের আওতায় এনে দ্রুত গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।