আজ মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫ || ২৯ আশ্বিন ১৪৩২ বঙ্গাব্দ মঙ্গলবার, ০৬:২৭ অপরাহ্ন
মঙ্গলবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৫   |   sonalisandwip.com
গণতন্ত্রের জয়গাথা: সেড্রাস থেকে বাংলাদেশের ছাত্রজনতা, আরব বসন্ত ও ভেলভেট বিপ্লবের বার্তা

 গণতন্ত্র হলো মানুষের আত্মার প্রতিধ্বনি—
এটি এক শাসনব্যবস্থা নয়, বরং এক বিশ্বাস: ক্ষমতার উৎস জনগণ।
ইতিহাসের প্রতিটি অধ্যায়ে দেখা গেছে, যখন কোনো শাসক জনগণের ইচ্ছাকে উপেক্ষা করে, তখনই শুরু হয় তার পতনের কাউন্টডাউন।
হাইতির রাওল সেড্রাস, পানামার মানুয়েল নরিয়েগা, পূর্ব ইউরোপের কমিউনিস্ট জান্তারা, কিংবা সাম্প্রতিক বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার জাগরণ—
সব ঘটনাই এক সুরে বলে, “স্বৈরশাসনের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। ”


⚔️ হাইতির রাওল সেড্রাস: বন্দুকের সামনে জনগণের বিজয়

১৯৯১ সালে হাইতির সেনাপ্রধান রাওল সেড্রাস গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জঁ-বে’র্ট্রান্ড অ্যারিস্টাইড-কে উৎখাত করে সামরিক শাসন জারি করেন।
তার শাসনকাল ছিল রক্তপাত, নিপীড়ন ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের যুগ।
কিন্তু আন্তর্জাতিক চাপ, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা এবং যুক্তরাষ্ট্রের “অপারেশন আপহোল্ড ডেমোক্রেসি” (১৯৯৪) শেষ পর্যন্ত তাকে বাধ্য করে ক্ষমতা ছাড়তে।
অ্যারিস্টাইড ফিরে আসেন, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়।
এ ঘটনা প্রমাণ করে—সামরিক ক্ষমতার স্থায়িত্ব নেই, কিন্তু জনগণের আকাঙ্ক্ষা চিরন্তন।


???? পানামার নরিয়েগা: স্বৈরশাসনের পতনের আরেক পাঠ

পানামার সেনানায়ক মানুয়েল নরিয়েগা ১৯৮৩ সালে ক্ষমতা দখল করেন।
দুর্নীতি, মাদক পাচার ও সন্ত্রাসের জালে দেশটিকে ডুবিয়ে দেন।
কিন্তু ১৯৮৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের “অপারেশন জাস্ট কজ” অভিযানে তিনি গ্রেপ্তার হন এবং তার পতনে পানামা আবার গণতন্ত্রে ফিরে আসে।
এই ঘটনাও দেখায়—
যে শাসন জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টিকে থাকে, তার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

???????? বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার জাগরণ: গণতন্ত্রের নবজন্ম

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম আবারও প্রমাণ করেছে—
গণতন্ত্র কোনো দলীয় সম্পদ নয়, এটি জনগণের অধিকার।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন দেশে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
তারা দেখিয়েছে— “যখন জনগণ রাস্তায় নামে, তখন কোনো স্বৈরাচার,কোনো ক্ষমতা টিকে থাকতে পারে না।”

এই আন্দোলন শুধু বাংলাদেশের নয়, এটি সমগ্র বিশ্বের তরুণ সমাজের জন্য এক অনুপ্রেরণা—
গণতন্ত্রের জন্য লড়াই কখনো বৃথা যায় না।


???? ইউরোপের ভেলভেট রেভলিউশন: অহিংস বিদ্রোহের শক্তি

১৯৮৯ সালে চেকোস্লোভাকিয়ায় সংঘটিত ভেলভেট রেভলিউশন ইতিহাসে এক শান্তিপূর্ণ বিপ্লবের অনন্য উদাহরণ।
এটি ছিল অহিংস গণঅভ্যুত্থান, যা কোনো রক্তপাত ছাড়াই কমিউনিস্ট স্বৈরশাসনের অবসান ঘটায়।
নাট্যকার ও মানবাধিকারকর্মী ভ্যাকলাভ হাভেল জনগণের সমর্থনে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন।
এ বিপ্লব প্রমাণ করে, অস্ত্র নয়, নৈতিক শক্তিই গণতন্ত্রের সর্বোচ্চ অস্ত্র।

????️ মধ্যপ্রাচ্যের আরব বসন্ত: স্বাধীনতার হাওয়া

২০১০ সালের ডিসেম্বরে তিউনিশিয়ার এক তরুণ বিক্রেতা মোহাম্মদ বুয়াজিজি পুলিশের অন্যায়ের প্রতিবাদে আত্মাহুতি দেন।
তার আত্মদান থেকে জ্বলে ওঠে আরব বসন্ত (Arab Spring)—
যা ছড়িয়ে পড়ে মিসর, লিবিয়া, ইয়েমেন ও সিরিয়া জুড়ে।
মিসরে পতিত হয় হোসনি মোবারক, লিবিয়ায় শেষ হয় গাদ্দাফির শাসন, আর তিউনিশিয়া পায় গণতন্ত্রের নতুন সূচনা।
যদিও কিছু দেশে বিপ্লব ব্যর্থ হয়েছিল, তবুও আরব বসন্ত প্রমাণ করেছে—
মানুষের স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা নিভিয়ে রাখা যায় না।

???? ইতিহাসের চূড়ান্ত সত্য: জনগণ অজেয়

রাওল সেড্রাস, মানুয়েল নরিয়েগা, পিনোচে, ইদি আমিন, মুশাররফ বা মিয়ানমারের জান্তা—
সবাই বন্দুক হাতে নিয়েছিল, কিন্তু জনগণের কণ্ঠরোধ করতে পারেনি।
আরব বসন্ত, ভেলভেট বিপ্লব কিংবা বাংলাদেশের গণআন্দোলন—
সবই একই বার্তা দেয়:   “Power may control people for a while,
but only democracy wins their hearts forever.”


✊ উপসংহার

গণতন্ত্রের পথ কঠিন, কিন্তু মানবতার পথও এটিই।
এ পথেই আছে ন্যায়, মর্যাদা ও আশা।
সামরিক বুটের নিচে সত্য সাময়িকভাবে চাপা পড়তে পারে, কিন্তু নিভে যায় না।
যে মুহূর্তে জনগণ জেগে ওঠে,
তখনই বাজতে শুরু করে ইতিহাসের অপরাজেয় সঙ্গীত, “গণতন্ত্রের জয় হোক, মানুষের মুক্তি হোক।” 

 -কাজী জিয়া উদ্দিন