আজ শনিবার, ২৪ মে, ২০২৫ || ৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ শনিবার, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন
মঙ্গলবার, ০৬ মে, ২০২৫   |   sonalisandwip.com
দেশের স্বনির্ভরতা ও টেকসই উন্নয়ন কাঠামো বিনির্মাণে প্রকৌশলী নেতৃত্ব অপরিহার্য: মনজারে খোরশেদ আলম

মোবারক হোসেন ভূঁইয়া :: সোনালী সন্দ্বীপ ::
 
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)’র ৭৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ‘ইঞ্জিনিয়ার্স ডে’ উদ্যাপন উপলক্ষে আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের উদ্যোগে দুদিনব্যাপী কর্মসূচির প্রথম দিনে আজ ৬ মে দুপুরে কেন্দ্রের সেমিনার কক্ষে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

কেন্দ্রের সম্মানী সম্পাদক প্রকৌশলী খান মোঃ আমিনুর রহমান এর সঞ্চালনায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম আইইবি’র বিভিন্ন কর্মকান্ড, পরিকল্পনা ও প্রকৌশলীদের দাবীসমূহ তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে কেন্দ্রের ভাইস-চেয়ারম্যান (একা. এন্ড এইচআরডি) প্রকৌশলী মোঃ সাখাওয়াত হোসেন ও ভাইস-চেয়ারম্যান (এডমিন, প্রফেশ, এন্ড এসডব্লিউ) প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মনজারে খোরশেদ আলম বলেন, গত পনের বছর প্রকৌশলীরা একটি কর্তৃত্ববাদী সরকারের অধীনে কাজ করতে গিয়ে চরমভাবে নিষ্পেষিত হয়েছেন। বিগত সময়ে আমরা দেখেছি এই প্রতিষ্ঠানকে কিভাবে দলীয় রাজনীতির যাঁতাকলে পিষ্ঠ করা হয়েছে। রাষ্ট্রশক্তির সহায়তায় পেশীশক্তির মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চলেছে নিয়োগ, পদোন্নতি এবং নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য। শতশত যোগ্য ও মেধাবী প্রকৌশলীর পদোন্নতি এবং পদায়নকে বাধাগ্রস্থ করেছে ফ্যাসিবাদী শক্তির সহযোগীরা।

আপনারা জানেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর এখন একটি মুক্ত পরিবেশে সুষ্ঠুভাবে কাজ করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ৫ আগস্ট, ২০২৪ কর্তৃত্ববাদী সরকারের পতনের পর আইইবি’র পূর্বতন কমিটি কার্যক্রম থেকে বিরত থেকে গত ৯ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখে পদত্যাগ করে। এ প্রেক্ষাপটে আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের কার্যক্রম চলমান রাখার লক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ঊর্ধ্বতন প্রকৌশলীবৃন্দসহ বিপুল সংখ্যক সাধারণ প্রকৌশলীদের উপস্থিতিতে সাধারণ সদস্যদের উদ্যোগে ১০ জানুয়ারী, ২০২৫ বিকাল ৪ টায় এক বিশেষ সভা আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়।

সভায় প্রকৌশলীগন আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সার্বক্ষণিক স্বাভাবিক কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য কেন্দ্রের নির্বাহী কমিটি, কেন্দ্রীয় কাউন্সিল সদস্য, কাউন্সিল সদস্য ও ইআরসির জন্য পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়। বর্তমানে এই মুক্ত পরিবেশে একটি অরাজনৈতিক ও কল্যাণমূখী পেশাজীবি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধার করার জন্য আমরা সর্বাত্মক প্রচেষ্ঠা চালাচ্ছি।

কেন্দ্রের চেয়ারম্যান বলেন, স্বৈরাচারের শাসনের আমলে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ব্যাপক দুর্নীতি ও অর্থ পাচার করা হয়েছে। দলীয় চাপের মুখে প্রকৌশলীদের এধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত হতে বাধ্য করা হয়েছে। বর্তমানে মুক্ত পরিবেশে প্রকৌশলীরা সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করতে পারবে বলে তিনি বিশ্বাস করেন।

কিন্তু আত্মনির্ভরতা অর্জনের লক্ষে বিদেশী বিশেষজ্ঞ আনায়ন বন্ধ করতে হবে। বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রায় সকল প্রকৌশল প্রতিষ্ঠানে অপ্রকৌশলীরা নেতৃত্ব প্রদান করছেন। ফলে, উপযুক্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণে জটিলতা ও সময়ক্ষেপন ঘটে। বিলম্বিত ও আমলাতান্ত্রিক সিদ্ধান্তের কারণে দেশের মূল্যবান অর্থের অপচয় ঘটছে। এরফলে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। দেশের প্রাইভেট সেক্টরগুলোকে বিশেষজ্ঞ আনায়নের নামে বিদেশ নির্ভর করে তৈরী করা হয়েছে। অথচ এদেশে অনেক মেধাবী প্রকৌশলী রয়েছেন, যাঁদের যথার্থ মূল্যায়ন করা হয়নি।

আইইবি’র বিভিন্ন কর্মসূচি তুলে ধরে তিনি বলেন, আইইবি’র মূল কাজ হচ্ছে প্রকৌশল পেশার মানোন্নয়ন, পেশাজীবীদের বিভিন্ন সমস্যাবলীর সমাধানকল্পে কাজ করা, শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা, আন্তর্জাতিক কারিগরি সহায়তা সুযোগ সৃষ্টি করা এবং জাতীয় কারিগরি ইস্যুতে সরকারকে পরামর্শ দেয়া। এছাড়া দেশের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি, দক্ষ জনশক্তি তৈরী, প্রযুক্তিগত শিক্ষা প্রদান ও প্রসার, প্রকৌশল ও বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং সমতুল্য এএমআইই ডিগ্রী প্রদান। আইইবি, চট্টগ্রাম কেন্দ্র সারা বছরব্যাপী বেকার যুবকদের সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিভিন্ন ট্রেডকোর্স প্রশিক্ষণ এবং এ জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও কর্মোপযোগী প্রশিক্ষণ কর্মসূচি গ্রহণ করে থাকে।

তিনি প্রকৌশলী সমাজের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে কিছু দাবী তুলে ধরেন। দাবীগুলোর মধ্যে রয়েছে- (১) প্রকৌশলী সংস্থাসমূহের শীর্ষ পদগুলোতে প্রকৌশলী পদায়ন করতে হবে। (২) প্রকৌশলীদের পদোন্নতি ও পদায়ন নিশ্চিতকরণ। (৩) বিভিন্ন প্রকৌশল সংস্থাসমূহকে বিসিএস ক্যাডারভুক্তকরণ। (৪) বেসরকারী প্রকৌশলীদের জন্য চাকুরী বিধি প্রণয়ন করতে হবে। (৫) বিভিন্ন প্রকল্পে প্রজেক্ট ডাইরেক্টর হিসেবে প্রকৌশলীদের নিয়োগ। (৬) বিশেষ সেবা আমাদানীর নামে বিদেশী কারিগর ও প্রকৌশলীদেরকে বাংলাদেশে নিয়োগ বন্ধ করে দেশীয় মেধাবী প্রকৌশলীদেরকে নিয়োগ দেয়া।

তিনি দুদিনব্যাপী ইঞ্জিনিয়ার্স ডে কর্মসূচির তুলে ধরেন। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে- সকালে জাতীয় পতাকা ও আইইবি’র পতাকা উত্তোলন, শপথ বাক্য পাঠ ও বর্ণাঢ্য র‌্যালী এবং সন্ধ্যায় জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে আহতদের সহায়তা, অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া-২০২৫ প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ, প্রকৌশল পেশা ও সমাজ সেবায় কৃতিত্ব অবদান রাখায় প্রকৌশলীদের বিশেষ সম্মাননা, ভিডিও প্রেজেন্টেশন, স্মৃতিচারণ এবং নৈশভোজ, সঙ্গীতানুষ্ঠান ও র‌্যাফল ড্র।।