আজ বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫ || ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ বৃহস্পতিবার, ০১:২০ অপরাহ্ন
বৃহস্পতিবার, ০৪ ডিসেম্বর, ২০২৫   |   sonalisandwip.com
বাংলাদেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লক্ষ

দেশে দরিদ্র সংখ্যাবৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর দরিদ্র্য মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দারিদ্র্যতা দূর করার জন্য আমাদের সরকারকে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। কিন্তু আমাদের উদ্যোগ ও চেষ্টা অনেক কম রয়েছে। দেশের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতা আমাদের পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে বাধার সৃষ্টি করছে।

২০২৫ সালে বিশ্ব ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩ কোটি ৬০ লক্ষ। দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে উল্টো পথে হাঁটছে বাংলাদেশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, দেশে চার বছর ধরে দারিদ্র্যের হার বাড়ছে।

সংস্থাটির অনুমিত হিসাব, ২০২৫ সালে দারিদ্র্যের হার হতে পারে ২১ শতাংশের কিছু বেশি। দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ। দেশের জনসংখ্যার বড় একটি অংশ দারিদ্র্যসীমার কিছুটা ওপরে থাকে। তারা উচ্চ মূল্যস্ফীতির মতো বিভিন্ন আঘাতের কারণে দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাওয়ার ঝুঁকিতে থাকে।

বিশ্বব্যাংকের হিসাবে ২০২২ সালে সংখ্যাটি ছিল ৬ কোটি ২০ লাখ। দেশে দারিদ্র্যের হার হিসাব করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সংস্থাটির খানা আয়–ব্যয় জরিপে এ তথ্য উঠে আসে।

সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ করা হয়েছিল ২০২২ সালে। তখন সার্বিক দারিদ্র্য হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের হিসাবটি মূলত প্রাক্কলন, যা করা হয়েছে ‘মাইক্রো-সিমুলেশন মডেল’ নামের একটি পদ্ধতি ব্যবহার করে। শ্রমবাজারের গতিশীলতা, প্রবাসী আয় এবং সরকারের ভর্তুকি ব্যয়কে ভিত্তি ধরে মাইক্রো-সিমুলেশন মডেলে দারিদ্র্যের হার পর্যালোচনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।

‘বাংলাদেশ: দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিশ্লেষণ, সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্যের হারের নতুন হিসাব দিয়েছে। সম্প্রতি রাজধানীর এক হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশে বিগত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশক থেকে উল্লেখযোগ্য হারে দারিদ্র্য কমতে শুরু করে (১৯৯১-৯২ সালে ছিল ৫৬ দশমিক ৭ শতাংশ)। ২০০০ সালের পর থেকে তা আরও গতি পায়।

বাংলাদেশ দারিদ্র্য কমানোর দিক থেকে বিশ্বে সুনাম কুড়িয়েছিল। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশ পেছন দিকে হাঁটছে।

‘বাংলাদেশ: দারিদ্র্য ও বৈষম্য বিশ্লেষণ, সমৃদ্ধির পথে অগ্রযাত্রা’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বিশ্বব্যাংক দারিদ্র্যের হারের নতুন হিসাব দিয়েছে।

সম্প্রতি রাজধানীর এক হোটেলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে বিশ্বব্যাংক ও বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান।

তিনি দেশে দারিদ্র্য কমার অতীত চিত্র তুলে ধরে বলেন, ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল দুর্ভাগ্যজনকভাবে ‘উল্টো ঘুরে যাওয়ার’ সময়কাল।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য দেখায়, এটি কোনো আকস্মিক পতন নয়, এটাই বাস্তবতা, দারিদ্র্য বেড়েছে। পিপিআরসিও দারিদ্র্য হার নিয়ে গত আগস্টে জরিপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে বলা হয়, ২০২৫ সালে দেশের সার্বিক দারিদ্র্য বেড়ে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, বর্তমানে মাসিক মাথাপিছু আয় ২ হাজার ৭৫০ টাকা হলে নিম্ন দারিদ্র্যসীমা এবং ৩ হাজার ৮৩২ টাকা হলে মোট দারিদ্র্যসীমা ধরা হয়। বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ সার্জিও অলিভিয়েরা অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

এতে দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মোটাদাগে যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া, চাকরি হারানো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মজুরি সেভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়েছে।

দারিদ্র্য কেন বাড়ছে বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ সার্জিও অলিভিয়েরা অনুষ্ঠানে প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। এতে দারিদ্র্য বৃদ্ধির কারণ হিসেবে মোটাদাগে যথেষ্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া, চাকরি হারানো, উচ্চ মূল্যস্ফীতি, মজুরি সেভাবে বৃদ্ধি না পাওয়া ইত্যাদিকে দায়ী করা হয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, ২০২৩ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২০ লাখ কর্মসংস্থান কম হয়েছে। ২০২৫ সালে আরও ৮ লাখ কর্মসংস্থান কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

চাকরির বাজার সংকুচিত হওয়ার সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি পড়েছে নারী ও তরুণদের ওপর। ২০১৬ সালের পর বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধরনে পরিবর্তন এসেছে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

সংস্থাটি বলেছে, এ সময়ে সামগ্রিকভাবে বছরে প্রায় ১৫ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। তবে তার ৬৩ শতাংশই হয়েছে কৃষি খাতে। কৃষিতে কর্মসংস্থানে আয় কম। শহরে কর্মসংস্থান সৃষ্টি অনেকটা স্থবির ছিল। সরকারের সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির সুবিধা গরিবদের চেয়ে ধনীরা বেশি পায়।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২ সালে সবচেয়ে দরিদ্র ২০ শতাংশ পরিবারের মাত্র অর্ধেক এসব সামাজিক সহায়তা পেয়েছে। অথচ সবচেয়ে ধনী ২০ শতাংশ পরিবারের ৩৫ শতাংশও এসব সুবিধা পেয়েছে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, বাংলাদেশে সামাজিক খাতে সরকারি ব্যয় বাড়িয়েছে ঠিকই, তবে উপকারভোগী নির্বাচনের দুর্বলতা এসব ব্যয়ের প্রত্যাশিত প্রভাবকে অনেকটাই খর্ব করে দিচ্ছে।

ভর্তুকি দেওয়ার পদ্ধতিগত সমস্যার কারণে তুলনামূলক সচ্ছল পরিবারই এর সুবিধা বেশি পায়। ফলে দারিদ্র্য হ্রাস ও বৈষম্য কমানোর অগ্রগতি সীমিত হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির পরিধি বেড়েছে, তবে এর ব্যবস্থাপনা ও উপকারভোগী নির্বাচন অদক্ষ বলেও উল্লেখ করা হয় বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে।

এতে বলা হয়, ২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে শহরে সামাজিক সহায়তার আওতা দ্রুত বেড়েছে। ১৬ শতাংশ থেকে বেড়ে তা সাড়ে ৩৪ শতাংশ হয়েছে। সংখ্যার দিক থেকে এটা বেশ ভালো।

তবে এসব সুবিধা সচ্ছল মানুষের কাছে যাওয়া বন্ধ করা যায়নি। বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

বিশ্বব্যাংক বলছে, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি বাংলাদেশের দারিদ্র্য ও আঞ্চলিক বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে অর্জিত সাফল্য হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

জলবায়ু পরিবর্তন ২০৫০ সাল নাগাদ ১ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। কৃষি খাতে জিডিপির (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রায় এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত কমিয়ে দিতে পারে। বাংলাদেশ আঞ্চলিক বৈষম্য, বিশেষ করে দেশের পূর্ব-পশ্চিম বৈষম্য কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।

২০১০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চল এবং উচ্চ দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকায় গরিব মানুষের সংখ্যা দ্রুত কমেছে। কিন্তু বিভিন্ন রকমের জলবায়ুজনিত ঝুঁকি ভবিষ্যতে আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়াতে পারে বলে মনে করে বিশ্বব্যাংক।

বিশ্বব্যাংকের মতে, বন্যা ও খরা গ্রামীণ পরিবারের ওপর অসামঞ্জস্যভাবে প্রভাব ফেলে।

এসব অভিঘাত থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর তাদের সামর্থ্য অনেকটাই নির্ভর করে স্থানীয় অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার ওপর। দারিদ্র্য কমার গতি বাড়াতে চারটি সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক:

এক. উৎপাদনশীল খাতে কর্মসংস্থানের ভিত্তি মজবুত করা;

দুই. দরিদ্র ও ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য শোভন কর্মসংস্থানের সুযোগ বিস্তৃত করা; তিন. গ্রামের দরিদ্রদের জন্য কার্যকর বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলা এবং চার. সমতাভিত্তিক ও দক্ষ রাজস্বনীতির মাধ্যমে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা বৃদ্ধি।

অনুষ্ঠানে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনের দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে তিনটি সময়কাল ধরে বিশ্লেষণ করেন।

তিনি বলেন, ২০১০ থেকে ২০১৬ সাল সময়কাল পুরোনো গতিময়তার ধারাবাহিকতা। এ সময় দারিদ্র্য হ্রাস ও প্রবৃদ্ধির সম্পর্ক উল্টো পথে না গেলেও তার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছিল।

দ্বিতীয় পর্ব ২০১৬ থেকে ২০২২ সাল, যখন দারিদ্র্য কমার গতি কমেছে। ওই সময়ে এক নতুন রাজনৈতিক অর্থনীতি তৈরি হয়েছে, ঋণনির্ভর অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবকিছু ছাপিয়ে গেছে। নিয়মভিত্তিক সমাজের জায়গা নিয়েছে দুর্নীতিনির্ভর প্রণোদনা। রাজনৈতিক গণতন্ত্রের অবক্ষয়কে আরও জোরদার করেছে অর্থনৈতিক গণতন্ত্রের দুর্বলতা।

হোসেন জিল্লুর রহমানের মতে, ২০২২ থেকে ২০২৫ সাল ‘উল্টো ঘুরে যাওয়ার’ সময়কাল। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন বহু মোড়ের সামনে-এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) উত্তরণ, মধ্যম আয়ের দেশ, নির্বাচিত সরকারের প্রত্যাবর্তন। কিন্তু আমরা কতটা প্রস্তুত?’

বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যঁ পেম উল্লেখ করেন, প্রথাগতভাবে দারিদ্র্য কমানোর গতি বাড়ানো যাবে না। যুবক, নারী ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর অর্থনীতিবিদেরা এর ওপর আলোচনা করেন। এই পর্ব সঞ্চালনা করেন বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান।

তিনি বলেন, বিগত কয়েক বছরে দারিদ্র্য বেড়েছে, এটা বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। কিন্তু বিবিএস এই বিষয়ে নীরব ছিল।

এই পর্বে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, টেকসই দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্যোগ নিতে হবে। টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু সুপারিশ করেছে সরকার গঠিত শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও সেই নির্দেশনা আছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক এনামুল হক বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে এ দেশে সরকারি বিনিয়োগ গুরুত্ব অনেক বেশি। কৃষি খাতের উন্নয়ন করা উচিত। কারণ, ৪২ শতাংশ জনগোষ্ঠী কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য সায়মা হক বিদিশা বলেন, মানুষের আয় বাড়াতে মানসম্মত বা শোভন কাজের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে দারিদ্র্যও কমবে। কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে উদ্যোক্তাদের অর্থায়নের সুবিধা সৃষ্টি করার ওপর জোর দেন প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক উজমা চৌধুরী।

তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপরও দারিদ্র্য কমা বা বৃদ্ধির বিষয়টি নির্ভর করে। বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জ্যঁ পেম উল্লেখ করেন, প্রথাগতভাবে দারিদ্র্য কমানোর গতি বাড়ানো যাবে না। যুবক, নারী ও ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর জন্য কাজের ব্যবস্থা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পিআরআইয়ের চেয়ারম্যান জাইদি সাত্তার। তিনি বলেন, গত কয়েক দশকে বিপুলসংখ্যক মানুষ দারিদ্র্যসীমার ওপরে উঠেছে। নিজেদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করেছে। কিন্তু এখন দারিদ্র্য কমার পরিবর্তে বেড়েছে।

এ ছাড়া অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন বিশ্বব্যাংকের রিজওনাল প্র্যাকটিস ডিরেক্টর সেবাস্তিয়ান একার্ডট। দারিদ্র্য সংখ্যা কমানোর উপায় :

১. কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে বেকারত্ব দূর করা যাবে। বেকারত্ব কমলেই দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে আসবে। আমাদের উৎপাদন খাত হুমকির সম্মুখীন। ব্যাংকের সুদের হার এখন ১৫-১৬ শতাংশ। গ্যাসের মুল্য অধিক। গ্যাসের সরবরাহ সুনিশ্চিত নয়। বিদ্যুতের মূল্য এখন অনেক বেশি। নতুন কোন গড়ে উঠছে না। দেশী বিদেশী বিনিয়োগ গত এক বচর হয় নাই বললেই চলে। বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে দেশী বিনিয়োগকারীদের পূর্বেই এগিয়ে নিয়ে আসতে হবে। এইজন্য নীতি সহযোগিতাও সুদের হার ৯ শতাংশের নীচে নামিয়ে আনতে হবে।

২. দরিদ্র মানুষের জন্য আর্থিক সহযোগিতা সরকারকে বাড়াতে হবে। হালকা কর্মসূচির মাধ্যমে দরিদ্র্য মানুষকে কাজ দিতে হবে। দরিদ্র্য মানুষের পরিবারকে শিক্ষার আওতায় আনতে হবে। দ্বীপ ও চর অঞ্চলের মানুষের শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। শিক্ষা ছাড়া দারিদ্র্যতা দূর করার বিকল্প কোন উপায় নেই। সেই পথে সরকারকে হাটতে হবে।

৩. আমাদের বাজার ব্যবস্থার পরিবর্তন আনতে হবে। দরিদ্র্য মানুষের উৎপাদিত পণ্যের মূল্য নিশ্চিত ও ন্যায্যতা দিতে হবে। কৃষক তার পণ্যের প্রকৃত মূল্য পাচ্ছে না। চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। চাদাবাজদের বিচারের সম্মুখীন করতে হবে। আইনের শাসনকে সকলের জন্য নিশ্চিত করতে হবে।

৪. আমাদের রাজস্বনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। সকলের জন্য সমতাভিত্তিক রাজস্ব নীতি প্রনয়ন করতে হবে। সকলকে করের আওতায় থাকার জন্য নীতি প্রনয়ন করতে হবে। দরিদ্র মানুষের জন্য আর্থিক সহযোগিতার হাতকে প্রশস্ত করতে হবে। বেকার ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। বয়স্ক ভাতা বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করে, নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন করে দরিদ্র মানুষের কর্মসংস্থান করতে হবে। গ্রামভিত্তিক শিক্ষা স্থাপনে প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে। সর্বোপরি দুর্নীতি যে ‘না’ বলতে হবে। দুর্নীতি, ঘুষ ও চাঁদাবাজি নির্মুলের মাধ্যমে দেশের দারিদ্র্য হার কমিয়ে আনতে হবে।

=

আবুল কাসেম হায়দার : লেখক: প্রতিষ্ঠতা চেয়ারম্যান ইস্টার্ন ইউনির্ভাসিটি, ইসলামিক ফাইন্যান্স এন্ড ইনভেস্টমেন্ট লি:, অষ্ট্রেলিয়ান ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ও আবুল কাসেম হায়দার মহিলা কলেজ ,সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, সাবেক সিনেট সদস্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও সাবেক সহ - সভাপতি এফবিসিসিআই। তাং০১.১২.২০২৫