দেশে এখনো সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের হচ্ছে এবং গ্রেপ্তার করার ঘটনা ঘটছে। সরকার একাধিকবার সময় নিয়েও সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে পারেনি।
এখন পর্যন্ত লেখক ও উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়নি। এতেই প্রমাণ হয়, সাইবার আইন বাতিল নিয়ে সরকারের আগ্রহ নেই।
লেখক ও উদ্যোক্তা মুশতাক আহমেদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা এ অভিযোগ করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন মিলনায়তনে এই স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। এর আয়োজন করে ডিএসএ (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) ভিকটিমস নেটওয়ার্ক ও ভয়েস ফর রিফর্ম নামের দুটি সংগঠন।
র্যাবের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গাজীপুরের কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী ছিলেন মুশতাক আহমেদ (৫৩)। ২০২১ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি অসুস্থ অবস্থায় গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। তখন অভিযোগ ওঠে যে মুশতাক আহমেদকে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
স্মরণসভায় মুশতাক হত্যার বিচার চেয়ে ডিএসএ ভিকটিমস নেটওয়ার্কের আহ্বায়ক ও সভার সভাপতি গোলাম মাহফুজ জোয়ার্দার বলেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সরকার জুলুমতন্ত্র ও মাফিয়াতন্ত্রের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছে কি না, তার প্রমাণ হবে মুশতাক হত্যা মামলা ও বিচার সরকার করে কি না, সেটার মাধ্যমে। তিনি সব নিবর্তনমূলক আইন অবিলম্বে বাতিলের দাবি করেন।
সভার সঞ্চালনা করেন ডিএসএ ভিকটিমস নেটওয়ার্কের সদস্যসচিব এবং রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক দিদারুল ভূঁইয়া। তিনি বলেন, ‘এই সরকার গঠনের পর আমাদের কাছে প্রথম কমিটমেন্ট (অঙ্গীকার) করা হয় সব কালাকানুন বাতিল করা হবে। বারবার সময় নিয়েও তা হয়নি।’
মানবাধিকারকর্মী রেজাউর রহমান লেনিন বলেন, ৫ আগস্টের পর অল্প সময়েই অনেক মামলার সুরাহা হয়েছে, কিন্তু সাইবার সিকিউরিটি আইনে করা মামলায় ভুক্তভোগীদের নিয়ে ভাবেনি সরকার।
সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখপাত্র উমামা ফাতেমা মুশতাক আহমেদের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের সময় যখন গুম ও গ্রেপ্তারে বারবার দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাচ্ছিল, তখন আমি মুশতাক ভাইয়ের একটা কথা স্মরণ করতাম, “আমরা তো কোনো অপরাধ করি নাই। আমরা কেন ভয় পাব”।’
ভয়েস ফর রিফর্মের সমন্বয়ক ফাহিম মাশরুর এখনো সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল না হওয়া এবং এই আইনে মামলা ও গ্রেপ্তারের ঘটনার সমালোচনা করেন।
কুড়িগ্রামে গত সোমবার কৃষক সংগঠক নাহিদ হাসান নলেজের বিরুদ্ধে হওয়া সাইবার নিরাপত্তা আইনের মামলার কথা উল্লেখ করে সরকারের সমালোচনা করেন রাজনৈতিক সংগঠক বাকী বিল্লাহ।
স্মরণসভায় রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের জাতীয় সমন্বয় কমিটির সদস্য জাকিয়া শিশির, জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রবাসী বিষয়ক সম্পাদক এহতেশাম হক, কেন্দ্রীয় সংগঠক প্রীতম দাশসহ অনেকে বক্তব্য দেন।
২০২০ সালের মে মাসে লেখক মুশতাক আহমেদ, কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ইসলাম ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মিনহাজ মান্নানকে র্যাব গ্রেপ্তার করে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক কথাবার্তা ও গুজব ছড়ানোর অভিযোগে তাঁরাসহ মোট ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করে র্যাব। সেই মামলায় দুজন জামিনে মুক্তি পেলেও মুশতাক ও কিশোরের জামিন আবেদন ছয়বার নাকচ হয়েছিল।
লেখক মুশতাকের মৃত্যুর পর ব্যাপক সমালোচনা ও আন্দোলন হয়। পরে জামিন পান কার্টুনিস্ট কিশোর।